রফিক আনোয়ার 

রফিক আনোয়ার একজন নিভৃতচারী প্রচার বিমুখ সব্যসাচী লেখক সত্তা।পাঠ্যাভাস সুবাদে ছোটকাল থেকেই তাঁর লেখালিখি শুরু হয়।দৈনিক ইত্তেফাকের ‘কচি কাঁচার’ মেলায় ছড়া দিয়ে শুরু হলেও তা পূর্নতা পায় শৈশব উত্তীর্ন কৈশরে।১৯৬৩ সালে ‘দশ্চক্র’ নাটককের মাধ্যমে লেখক হিসেবে আনষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ।কিন্তু প্রকাশ মাত্রই নাটকটি -স্বৈরশ্বাসক আইয়ুব শাহির রোষানলে পড়ে নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্রাপ্ত হলে তরুন লেখকের মনোজগতে ঘটে যায় নানা উত্থান পতন।সাতবছর নীরব থাকার পর দ্বিতীয় নাটক ‘মহাকালের প্রতিধ্বনি’ নিয়ে ১৯৭০ সালে লেখার ভূবনে আবারো তাঁর আবির্ভাব ঘটে ঠিকই কিন্তু কী কারনে জানা নেই আবারও তিনি দীর্ঘ দুদশকের বেশী সময় ধরে নীরব হয়ে যান।১৯৯২ সালে লেখক ইন্দোনেশিয়া সফরে গেলে আক মর্মান্তদ দূর্ঘটনার প্রেক্ষিতে “দেখা হয়নি’ নামে ভ্রমন -আত্মজৈবনিক লেখার মাধ্যমে তিনি পাঠকের দরবারে আবার হাজির হন।এরপর সরকারি চাকুরির অবসান, এবং বিরতীহীন লেখা শুরু।তাঁর লেখালিখির ক্যানভাসও নানা মাত্রার বিস্তৃত ও বিষয় বৈচিত্রে ভরপুর।সাহিত্যে এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরন করেননি।গল্প,উপন্যাস,নাটক,কবিতা,প্রবন্ধ,ভ্রমন,রম্য,স্মৃতিকথা,মুক্তিযুদ্ধ,আত্মজীবনী,গবেষনা,সমালোচনা সাহিত্য,ধর্মদর্শন সব ধরনের লেখাতেই রয়েছে তাঁর সহজাত মুন্সিয়ানা ও গভীর জ্ঞানের পরিচয়।চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার নানুপুর গ্রামে ১৯৪২ সালের ২ এপ্রিল লেখকের জন্ম।স্বদেশী আন্দোলনের তাত্ত্বিক-সংগঠন,উত্তরাধিকার সূত্রে সুফি-আধ্যাত্বিকতায় ঋদ্ধ,বিত্ত-ভৈববের উদাসীন এক ব্রাত্য জমিদার সুরপ্রিয়াসী মরমী সাধক আহমদ সামসুল আনোয়ার চৌধুরী লেখকের পিতা।উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুফি-আউলিয়া হযরত গাউসুল আজম মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) মাইজভান্ডারি লেখকের প্রমাতামহ।তাঁর লেখক সত্ত্বা ও ব্যক্তিস্বত্তার মধ্যে কোন দ্বৈততা নেই যা আমাদের সাহিত্যে বিরল। এ যাবত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৯।এই মহিয়সী লেখক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন ১৫ই ডিসেম্বর ২০১৭।